Type Here to Get Search Results !

অনুগল্প "গরিবের কান্না"

Sikha Guru 0

"গরিবের কান্না"

                                          _এম, সালাহউদ্দিন 
      The photo is collected

দুনিয়া জুড়ে গরিবের আর্তনাদ আজ এক দাবানলে পরিণত হয়েছে; যার আগুন গ্ৰামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায়, দেশ-বিদেশের কোনে কোনে পৌঁছাতে দেরি করেনি। ওই গফুর চাষির বড় ব‍্যাটাটা অর্থের অভাবে পড়াশুনা ছাড়তে বসেছিল। ছোটোবেলা থেকেই গফুরের ব্যাটা পড়াশুনায় খুব ভালো, পাড়ার মোরব্বিরা তো ওর পড়া শুনে তোতা পাখি বলেও ডাকত; যা পরিস্কার উচ্চারণ জুড়ি মেলা ভার। পরিবারে অনটনের জন্য গফুর ওর ব্যাটাকে ছোটো থেকেই সাথে নিয়ে যায় মাঠে; ঘাস তোলা, ভুঁই নিরানো, জমিতে হাল দেওয়া, মই দেওয়া, বীজ বপন করা, ফসল কাটা সব কিছুই শিখিয়ে ছিল ছেলেটাকে। ছেলেটা ছোটো হলেও বুঝত পরিবারের দুঃখের কথা, মা-বাবার দুঃখ ভরা জীবনের কথা। এইভাবে বাবার সাথে সাথে কাজ করে আর পড়াশুনা করে ছেলেটা; যা পড়াশুনা করে সবটুকুই স্কুলে, কোনো টিউশন পায়নি সে, তবুও আবার যখন বলদের গাড়ি নিয়ে বের হয় তখন স্কুলে যাওয়া শিকেই উঠত। এখন ও পড়াশুনা করছে ক্লাস নাইনে। স্কুলের যে একটা সাদা রঙের পোশাক ছিল সেটাও ছিঁড়ে গেছে, চালাবার মতো কোনো বুদ্ধি নেই, একেবারেই জীর্ণ হয়েগেছে পোশাকটা। স্কুলে অন্য পোশাক পড়ে গেলে শুনতে হয় হরেক রকম বকুনির ফুলঝুরি। গফুরের ব্যাটার যে শুধু পোশাকের অভাব তা নয়, নাইন পর্যন্ত পড়েছে তো দু-ক্লাসে কয়েকটি বই ও কিনতে পারেনি। তবুও ছেলেটা পড়তে চায়, কিছু জানতে চায়, সমাজকে কিছু দিতে চায়, কিন্তু ওর তো কিছুই নেই কি দিয়ে ও নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে। ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়া হলে পড়াশুনা ছেড়ে দিতে হয় তাকে কারণ হাতে নেই স্কুল ড্রেস কেনার টাকা, হাতে নেই বই কেনার টাকা, কিন্তু মনে জানার অদম্য আগ্রহ ছিল; মনটা বড়োই কেঁদেছিল ছেলেটার টাকার অভাবে আজ তার বুকভরা আশা মাটিতে বিলীন হতে যাচ্ছে। কেউ সহযোগিতা করারও ছিলনা‌‌ ‌‍ছেলেটার। ক্লাস নাইন পড়ে পড়াশুনা ছেড়ে রেলষ্টেশনে কুলিগিরির কাজে লাগে ছেলেটা। সকাল বেলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিকেলে বাড়ি ফিরত। বাড়ি ফিরে চেহারার যা অবস্থা; মনে হত সারা শরীর যেন ষ্টেশনের ছাই এ ভরা।
ছেলেটার দুঃখ হত এই ভেবে যে , সে যদি আজ কোনো ভাবে পড়াশুনা করতে পারত তবে হয়ত একদিন কোনো চাকরি করত। সারাদিন ষ্টেশনে ছাঁই এর কাজ করে দিনের শেষে মিলত মাত্র ১৪ টাকা, সে পয়সায় দিব্যি হেসে খেলে চলে যেত সংসার কিন্তু তার মন হাসতোনা। বছর দুয়েকের মধ্যে বিয়ে ঠিক হল ছেলেটার, বিয়েও হল। স্ত্রী এইট পাশ, এইট মানে তখনকার যুগে ভালো শিক্ষিতা। স্ত্রীর ইচ্ছা হল স্বামীকে পড়াবে কিন্তু অর্থই প্রধান বাধা। শ্বশুর বাড়ি থেকে খবর এল জামাই অর্থাৎ গফুরের ব্যাটা যদি পড়তে চায় তবে শ্বশুর পড়াশুনার অধিকাংশ খরচা দেবে। গফুরের ব্যাটার বুক ফুরে উঠল দুই-তিন বছর আগের ছেড়ে দেওয়া পড়াশুনা সে এখন জোড়া লাগতে পারবে, ভীষন খুশীর ব্যপার। কিন্তু এই খুশীর ব্যাপারের মধ্যে ও তিক্ত ফলের বীজ নিহিত ছিল। পড়াশুনা না হয় করবে শ্বশুরের কিছু পয়সায় কিন্তু সংসার কে চালাবে, সংসারে মা-বাবা, স্ত্রী-বোন এবং সে নিজে, পাঁচজনের তো পেটের ভাত জোগাড় করতে হবে। গরিবের কান্না কোনোদিন শেষ হবার কিনা সময় বলবে কিন্তু অসংখ্য গরিব যে দারিদ্রতার কারণে পড়াশুনা ছাড়ছে তা নিশ্চিত। গফুরের ব্যাটা পড়াশুনা চালানোর পাশাপাশি বই বিক্রির ব্যবসাও শুরু করল তবুও আবার নিজের পুঁজি নয়। কোনো এক ভদ্রলোক বই গুলো দিত আর সেগুলো গফুরের ব্যাটা পুটুলিতে বেঁধে জালসায় জালসায়, অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠানে, শীত-বৃষ্টি, গ্রীষ্ম-বর্ষার দিনে শত কষ্ট করে দুটো টাকা রোজগারের জন্য বেরিয়ে যেত। বিয়ে করার পর সাতটি বছর পেরোলো, ছেলেটা বি.এ পাশ করেছে। বি.এ পাশ করার পরেই ঝাড়খন্ডের এক আপার প্রাইমারি স্কুলে চাকরির খবর এসেছিল কিন্তু আট হাজার টাকা জোগাড় করতে না পারায় চাকরি ও হয়নি।আজ সারা ভারত সহ দুনিয়া জুড়ে ঘুষ নামক জঘন্য, বেহায়া, প্রথাটাকে যদি সমূলে উচ্ছেদ করা হয় তাহলে হয়ত হয়ত কোটি গরিবের কান্নার রোল কিছুটা ও কম হবে।
পড়াশুনায় অত্যন্ত মেধাবী হয়েও ঘুষের টাকা জোগাড় করতে না পারায় চাকরি হয়না অসংখ্য যুবকের। আজকের চাকরি পরিক্ষায় যদি মেধার বিচার না করে টাকার বিচার করে চাকরি দেওয়া হয় তবেতো গরিবের কান্না আরো জোরালো হবে, আজ এক কোটি গরিব কান্না করলে কাল দু কোটি গরিব কাঁদবে।  গফুরের ব্যাটার মতো শত শত ছেলে নিজের সুপ্ত আশাকে বিকশিত করার জন্য শত লড়াই, শত বাধা বিপত্তিকে লাথি মেরে সামনে এগিয়ে যখন দেখবে হতাশা, ঘুষের জন্য চাকরি না হওয়ার বেদনা তারা কোথায় লুকোবে? কেমন করে সহ্য করবে এই ব্যথা?

যার জন্য রক্তকে পানি মনে করে দিন রাত এক করে খেটেছে; পড়াশুনা করেছে সংসার চালিয়েছে, সেই পরিশ্রম আজ রাস্তার মোড়ে বা শিক্ষিত  সমাজের টেবিলের তলায় বিক্রি। এ সমাজকে বদলাতে চাই স্বচ্ছ নাগরিক যারা ধর্মকে নয় কর্মকে বিশ্বাস করবে, যারা ঘুষকে নয় মানুষকে অধিকার দেবে, যারা জাত-পাতকে নয় দেশের উন্নয়নের কথা ভাববে; ভাববে কি করে গরিবের কান্না থামানো যায়।

      এম, সালাহউদ্দিন
            বি.এ  প্রথম বর্ষ   

Post a Comment

0 Comments

Show ad in Posts/Pages